কোরআন শরিফে পা দেয়নি, কোরআন শরিফ যেখানে আছে তার পাশে পা দিয়েছে : বুড়িমারী কেন্দ্রীয় মসজিদের খাদেম
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় এক যুবককে পিটিয়ে ও পরে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের বুড়িমারী স্থলবন্দর (বাঁশকল) এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তির নাম শহীদুল নবী জুয়েল। তার বাড়ি রংপুর নগরীর শালবন মিস্ত্রিপাড়া এলাকায়। তিনি ক্যান্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের লাইব্রেরিয়ান ছিলেন। চাকরি চলে গেলে তিনি মানসিক ভাবে বিকারগস্ত (পাগল) হয়ে যান।
নিহতের এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানায় তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন এবং ধর্মপরায়ন লোক ছিলেন। এমন ঘটনায় তারা হতবম্ভ।
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় এই যুবককে পিটিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট করে কেউ কিছু বলতে পারছে না। যদিও স্থানীয়দের মধ্যে কেউ কেউ তার বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ আনছে।
অন্যদিকে আজ শুক্রবার সকালে রংপুর বিভাগ কেন্দ্রীক একটি অনলাইন গণমাধ্যমের সাক্ষাতকারে বুড়িমারী কেন্দ্রীয় মসজিদের খাদেম জানান, “অজ্ঞাত এক লোক মসজিদে ঢুকে র্যাব পরিচয় দিয়ে বলে কোরআন শরিফে অস্ত্র আছে,সে কোরআন শরীফ যেখানে আছে তার পাশে পা দিয়ে কিছু খুজতে থাকে,এসময় হোসেন ডেকোরেটর নামে এক ব্যাক্তি তা দেখতে পেয়ে ঐ ব্যাক্তিকে মসজিদের বাহিরে নিয়ে গিয়ে জুতা দিয়ে মারে, তারপর তাকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যাওয়া হয়, ঠিক তখনি চারদিকে রটে যায় সে কোরআন শরিফে পা দিয়েছে। ”
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, উত্তেজিত জনতার হাত থেকে ওই ব্যক্তিকে বাঁচাতে এ সময় বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়। একপর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদে রাখা ওই যুবককে টেনে-হিঁচড়ে বাইরে এনে পেটানো শুরু করে উত্তেজিত জনতা। একপর্যায়ে বিজিবির চেকপোস্ট (বাঁশকল) এলাকায় ওই ব্যক্তির শরীরে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় তার মোটরসাইকেলটিতেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টায় লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আবু জাফরসহ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তখন জেলা প্রশাসক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কী কারণে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে তা এখনি বলা যাচ্ছে না। তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তারপর এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট করে বলা যাবে।’
তবে ওই এলাকায় বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করায় এবং প্রশাসনের সক্রিয় চেষ্টায় বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন কুমার মোহন্ত একজনকে পুড়িয়ে মারার খবর নিশ্চিত করে বলেন, ‘এ ঘটনায় অপর এক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।
মুহূর্তের মধ্যে সেই খবর বাইরে ছড়িয়ে পড়লে সেখানে আশপাশের লোকজন জড়ো হতে থাকে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান পাটগ্রাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বাবুল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুন নাহার, পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন কুমার মোহন্ত। তাঁরা উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। একপর্যায়ে তাঁরাও সেখানে আটকে পড়েন।
এদিকে, এ ঘটনায় রংপুর নগরীর মুন্সীপাড়া এলাকার সুলতান জোবায়ের আব্বাস (৫১) নামের আহত এক ব্যক্তিকে পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
চিকিৎসাধীন সুলতান জোবায়ের আব্বাস নিজেকে দলিল লেখক দাবি করে হাসপাতালে আজ রাতে গণমাধ্যমকে জানান, তিনি তাঁর এক মক্কেলের সঙ্গে দেখা করতে এসে বুড়িমারীতে উত্তেজিত জনতার মারধরের শিকার হন। তাঁর সঙ্গে নিহত ব্যক্তির কোনো পরিচয় নেই।