একসময়ের ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার পাটগাতী ইউনিয়নে মধুমতির তীর ঘেরা গড়ে উঠা গ্রাম টুঙ্গিপাড়া। এখানেই বাবা শেখ লুৎফর রহমান ও মা সায়েরা খাতুনের কোল আলোকিত করে ১৯২০ সালের আজকের এই দিনে যে শিশুটি জন্ম নিয়েছিলেন তিনিই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান। বাবা-মা আদর করে ডাকতেন খোকা।
২০২১ সালে এই খোকার ১০১তম জন্মদিন পালন করছে বাংলাদেশসহ বহিবিশ্ব। বাংলাদেশ সরকার এই বছরটিকে ঘোষণা করেছেন মুজিববর্ষ হিসেবে। নানা আয়োজনে সারাবিশ্বে পালন করা হচ্ছে দিবসটি।
যাকে ঘিরে এতো আয়োজন তিনি মধুমতির শ্যামল পরিবেশে ঘোলাজলে গাঁয়ের ছেলেদের সাথে সাঁতার কাটা, দৌড়-ঝাপ, দল বেঁধে হা-ডু-ডু, ফুটবল, ভলিবল খেলায় ছিলেন দস্যি বালকদের নেতা। তখন কে জানত এই দস্যি বালকদের নেতাই একদিন বিশ্বনেতা, বাঙালি জাতির পিতা হবেন?
গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাধ্যমে পড়ার শুরু পরে ভর্তি হন গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে। ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জ মাথুরানাথ ইনিস্টিউট মিশন স্কুলে ভর্তি হন এবং সেখান থেকেই পাশ করেন প্রবেশিকা।
এই স্কুলে থাকাকালীন সময়েই তাঁর প্রতিভা আর নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে। এমনিতেই ক্লাশের অন্যান্য ছেলেদের চেয়ে কিছুটা বয়সে বড় সেই সাথে তাঁর চরিত্রের দৃঢ়তা সকলকে মুগ্ধ করে। সকলের প্রিয় পাত্রে পরিণত হন তিঁনি। তাঁর পরিচিতি বাড়তে থাকে ‘মুজিব’ ভাই হিসেবে।
স্কুল জীবনেই শেখ মুজিব প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলেন। প্রথম মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার হন স্কুল জিবনেই। তারপর ধাপে ধাপে বাঙ্গালীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনে বহুবার কারাবরণ করেছেন।কিন্ত মাথা নত করেনি। তিনিই জাতিকে এনে দেয় একটি মানচিত্র।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তার বিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষকদের যেন গর্বের শেষ নাই। গ্রামের সাথে ছিলো যেন তার অত্তার সম্পর্ক।
বঙ্গবন্ধু তার ৫৫ বছরের আয়ুষ্কালের মধ্যে ৩৫ বছরে রাজনীতি এবং সংগ্রামী জীবনের যে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস সৃষ্টি করে গেছেন, তা বাঙালি জাতির হৃদয়ে বহতা নদীর মতোই বইতে থাকবে দীর্ঘকাল।
মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর ৩৫ বছরে রাজনৈতিক জীবনের ২৩ বছর (১৯৪৮-৭১) কেটেছে পাকিস্তানি শাসন-শোষণ এবং সামরিক শাসনের নামে নব্য ঔপনিবেশিকতার হাত থেকে এ দেশের সাত কোটি বাঙালিকে মুক্তি দেয়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে, আন্দোলন এবং সংগ্রামে।
মাত্র ৩ বছর ৭ মাস ৪ দিন ছিলেন যুদ্ধে ধ্বংসপ্রাপ্ত ৩০ লাখ শহীদের রক্তে ভেজা বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের শাসনকর্তা। ইতিহাস সত্যের পথে অবিরল, অবিচল। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে খুনিচক্র বঙ্গবন্ধুর নাম চিরতরে মুছে ফেলতে চেয়েছিল।
কিন্তু ব্যর্থ হয়ে খুনি মোশতাক-জিয়া, ফারুক, রশিদ, ডালিম ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। ৪৪ বছর পরেও খুনিদের ফাঁসির কাঠ গড়ায় ঝুলতে হয়েছে।
সময় চলে তার নিজ গতিতেই। অনুরূপভাবে সময়ের বিবর্তনে সৃষ্টি হয় ইতিহাস। আবার ইতিহাস সৃষ্টির প্রয়োজনেই পৃথিবীতে কিছু মানুষের আগমন কিংবা প্রস্থান। বাংলাদেশ আর বঙ্গবন্ধু একই সূত্র গাথা যা কখননোই আলাদা করার নয়।