করোনা ভ্যাকসিনে প্রতিদিনই আগ্রহ বাড়ছে। দেশের টিকার বুথগুলোতে বাড়ছে টিকা গ্রহীতার সংখ্যা। ভ্যাকসিন নেওয়ার বয়সসীমা ৫৫ থেকে নামিয়ে ৪০ করা হয়েছে। এতে টিকা কেন্দ্রে ভিড় বাড়ছে। টিকা গ্রহণের জন্য মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এর কারণ হিসেবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকা গ্রহণের পর সবাই সুস্থ আছেন। অল্পসংখ্যক মানুষের শরীরে পাশর্^প্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও তা ছিল মৃদু। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে তারাও এখন সুস্থ। এর মধ্য দিয়ে টিকার পাশর্^প্রতিক্রিয়া নিয়ে জনমনে যে সংশয় তৈরি হয়েছিল তা কেটে গেছে। এদিকে প্রত্যেকটি কেন্দ্রে টিকা গ্রহীতাদের
উপচেপড়া ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। টিকা কেন্দ্রে ভিড় সামলানোই এখন সরকারের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। ভিড় সামলাতে করোনার টিকা নেওয়ার জন্য টিকাদান কেন্দ্রে গিয়ে নিবন্ধনের সুবিধা আপাতত বন্ধ করার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
মন্ত্রী জানান, এ পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি মানুষ টিকা নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন। তিন লাখের বেশি মানুষ ইতোমধ্যে টিকা নিয়েছেন। মন্ত্রী আরও বলেন, এখন থেকে যারা নিবন্ধন করে কেন্দ্রে যাবেন, শুধু তাদেরই টিকা দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যদি টিকাদান কেন্দ্রে নিবন্ধনের প্রয়োজন পড়ে, তখন আবার জানানো হবে। টিকা নিয়ে অনেক ধরনের সমালোচনা হলেও মানুষের দ্বিধা কেটে গেছে এবং টিকা নেওয়ার আগ্রহ বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হচ্ছে। প্রত্যেককে এই টিকার দুটি ডোজ দেওয়া হবে। এভাবে আগামী জুনের মধ্যে দেশের সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষকে করোনা টিকা দেওয়া হবে। সরকারের কেনা ৫০ লাখ ডোজ এবং উপহার হিসেবে ভারতের পাঠানো ২০ লাখ ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা রয়েছে। অর্থাৎ এখন সরকারের হাতে আছে ৭০ লাখ ডোজ টিকা। প্রথম মাসের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে এনে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের গণটিকাদান পরিকল্পনায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রথম মাসে ৬০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। সরকারের হাতে থাকা ৭০ লাখ ডোজে জানুয়ারিতে ৩৫ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, সরকারের লক্ষ্য টিকাদান কর্মসূচি স্বতঃস্ফ‚র্ত রাখা। মানুষ যাতে উৎসবমুখর পরিবেশে টিকা নিতে পারেন তা নির্বিঘœ করার লক্ষ্যে প্রয়োজন অনুযায়ী পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হবে। গণহারে টিকা প্রয়োগের প্রথম দিন রোববার সারা দেশে সাকুল্যে টিকা প্রয়োগ করা হয় ৩১ হাজার ১৬০ জনের দেহে। এরপর প্রতিদিনই তা বাড়তে থাকে আশাব্যঞ্জক হারে। টিকা প্রয়োগের প্রথম সপ্তাহের সবশেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার এক দিনে টিকা গ্রহীতার সংখ্যা ছাড়ায় ২ লাখ। আগের দিন বুধবার এ সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৫৮ হাজার ৪৫১ জন। অর্থাৎ গত পাঁচ দিনের হিসাব পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রতিদিনই টিকাদানের হার ব্যাপকভাবে বাড়ছে। তাই ভিড় সামলাতে টিকা কেন্দ্রে আপাতত নিবন্ধন স্থগিত করা হয়েছে।
প্রথমে ৫৫ বছরের ওপরে নাগরিকদের নিবন্ধনের সুযোগ রাখা হয়েছিল। কিন্তু টিকা গ্রহণে মানুষের সাড়া কম থাকায় সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে টিকা গ্রহণের বয়সসীমা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৪০ বছর করা হয়। অর্থাৎ ৪০ বছর থেকে শুরু করে তার ওপরের বয়সি নাগরিকরা টিকার জন্য আবেদন করতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে কেন্দ্রে তাৎক্ষণিক নিবন্ধন করে টিকাদানের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জারি করা এ সংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হয়, জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে টিকা কেন্দ্রে গেলে সেখানেই তাৎক্ষণিক নিবন্ধন করে টিকাদানের ব্যবস্থা করা হবে। এরপরই মূলত টিকা কেন্দ্রে ভিড় বাড়তে থাকে। কয়েকদিন ধরে অধিকাংশ মানুষই জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে টিকা কেন্দ্রে উপস্থিত হন। এতে প্রত্যেকটি টিকা কেন্দ্রে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত মানুষ ভিড় করে।