নীলফামারীর জোড়াশিশু লাবিবা ও লামিসার অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। দীর্ঘ ১২ ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তারা পেয়েছে আলাদা শরীর।
সোমবার (২১ মার্চ) সকাল ৮টা ৫০ মিনিট শুরু হয় অস্ত্রোপচার। শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আশরাফ উল হক কাজল জানান, নিউরোসার্জারি বিভাগ, প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ, রেডিওলোজি বিভাগ, ইউরোলোজি বিভাগ, অর্থোপেডিকস বিভাগ, সার্জারি ও এনেসথেসিয়া বিভাগের প্রায় ৩৮ জন চিকিৎসক মিলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাদের দুজনকে আলাদা করা সম্ভব হয়। পরে তাদের দুজনকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে আইসিওতে নেওয়া হয়।
তিনি আরো জানান, তাদের যোনীদ্বারের পায়ুপথ ও মূত্রনালি খুবই কাছাকাছি- সেজন্য আলাদা করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ ছিল। আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ- তাদের দুজনেরই মেরুদণ্ডের নিচের অংশ জোড়া লাগানো ছিল। সেজন্য ক্ষত স্থানে কোনো আঘাত লাগলে প্যারালাইড হওয়ার ঝুঁকির আশঙ্কা ছিল। সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তাদের দুজনকে আলাদা করা হয়। আলাদা করার পরই তারা পা নাড়িয়েছে। এরপর তাদের দুইজনকে দুটি অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত সাড়ে আটটার মধ্যেই তাদের অপারেশনের কাজ সমাপ্ত করা হয়।
তিনি জানিয়েছিলেন মঙ্গলবার (২২ মার্চ) তাদের দুজনকে খেতে দেওয়া হবে। তাদের দুজনের জন্য প্রথম ৪৮ ঘণ্টা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। অপারেশনের এই ধকল সামলাতে তাদের কিছুটা সময় লাগবে। লামিসার মাসিকের রাস্তায় পরবর্তী ৩ থেকে ৬ মাস পর ছোট্ট একটি অপারেশন লাগবে। মজার বিষয় হলো- লাবিবার প্রথম জ্ঞান ফেরে জ্ঞান ফিরেই বলে ওঠে ‘ও কোথায়’। আমরা বুঝতে পেরেছি তার বোনকে খুঁজছে। লামিসার জ্ঞান কিছুক্ষণ পরে ফিরে আসে বলেও জানান তিনি।
অ্যানেসথেসিওলোজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোছলেমা বেগম জানান, দুই শিশুর ওজন ছিল ১৬ কেজি। তাদের শরীরের পানির পরিমাণ ঠিক রাখা ও জ্ঞান ফিরিয়ে আনাই ছিল আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। আল্লাহর রহমতে সবকিছু ঠিকমতো হয়েছে। আমাদের টিমও খুব স্ট্রং ছিল। অপারেশনের পর প্রথমে লাবিবার জ্ঞান ফিরে। এর কিছুক্ষণ লামিসার জ্ঞান ফিরেছে। তারা দু’জনই ভালো আছে।
নিউরোসার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফজলে এলাহী মিল্লাত জানান, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া শিশু দু’টিকে আলাদা করতে সক্ষম হয়েছি। স্পাইনালকডে কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি। পঙ্গু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আশরাফুল আলম জানান, আমরা ঢাকা মেডিকেলকে মানুষের আস্থা তৈরিতে কাজ করছি। এরকম সফল অস্ত্রোপচার আমাদের আরও এগিয়ে নেবে। আজ জোড়াশিশু আলাদা করতে সক্ষম হয়েছি, এতে চিকিৎসকরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, তেমনি নার্স, ওয়ার্ড বয়, আয়ারা ও অন্যান্য কর্মচারী সবাই পরিশ্রম করেছেন।