প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে কর্মরত সংস্থা অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন “বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবন-জীবিকার উপর কোভিড-১৯ এর প্রভাব: গণমাধ্যমের ভূমিকা” শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা কমনওয়েলথ ফাউন্ডেশন এর সহযোগিতায় ২৮ নভেম্বর,শনিবার ২০২০ আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে ঢাকা, বান্দরবান, পাবনা, রংপুর, ধামরাই থেকে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক আলবার্ট মোল্লা মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্রবন্ধে তিনি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উপর কোভিড-১৯ এর প্রভাবের কিছু বাস্তব চিত্র তুলে ধরেন। তিনিতার প্রবন্ধে বলেন, কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত, সুস্থ ও মৃত্যু সম্পর্কিত তথ্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কোনো পরিসংখ্যান থাকে না, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা করোনার কারণে সাধারণ চিকিৎসা সেবা পেতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে; বিশেষ চিকিৎসা সেবা যেমন-থেরাপি সেবাও
নিতে পারছে না, করোনা বিষয়ক সেবা দিতে যে হটলাইন চালু রয়েছে তা সব ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি নিতে পারছে না, করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে; অনলাইনে ক্লাসের ব্যবস্থা থাকলেও তা সব ধরনের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর উপযোগী নয়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অনেকেই চাকুরি
হারিয়েছেন; কারো কারো মজুরি কমিয়ে দেয়া হয়েছে, যারা ক্ষুদ্র ব্যবসার সাথে জড়িত তাদের অনেকেরই ব্যবসা পুঁজির অভাবে বন্ধ,
প্রতিবন্ধী কার্ড না থাকায় সরকারের কোভিড-১৯ সহায়তায় বিবেচনা করা হয়নি; প্রতিবন্ধী কার্ড না থাকার কারণে করোনাকালে সরকারি সুযোগ-সুবিধা যেমন-খাদ্য সহায়তা ও আর্থিক সহায়তা না পাওয়া, প্রতিবন্ধী ভাতা পেলে অন্যকোন সহায়তা না পাওয়া, কোভিড-১৯ সংক্রান্ত সরকারি সকল তথ্য সকল
ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি জানতে না পারা, মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা এবং সর্বোপরি বাজেটে অপর্যাপ্ততার কথা তুলে ধরেন।
এছাড়া আলবার্ট মোল্লা সমস্যা উত্তরণে করণীয় সম্পর্কেবলেন, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আলাদা কর্মপরিকল্পনা করা, জরিপের আওতায় আসা সকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে প্রতিবন্ধী কার্ড দেবার ব্যবস্থা করা, আগামী বাজেটে প্রতিবন্ধীব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের জন্য বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ, গুরুতর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কোভিড-১৯ পরীক্ষার নমুনা বাসা থেকে সংগ্রহ, সেবা দিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আলাদা হটলাইন চালু, কোভিড-১৯ বিষয়ে সরকার ৩৭টি গাইডলাইন ও নির্দেশিকা প্রণয়ন করেছে তা সব ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য অ্যাকসিসিবল করা, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় করা প্রয়োজন; এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি সমন্বয়ও খুবই জরুরি এবং কোভিড-১৯ বিষয়ে উন্নয়ন সংস্থা যেমন-বিশ^ব্যাংক, এশিয়ানডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, এআইআইবি কর্তৃক অর্থায়নকৃত সকল প্রকল্প প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয়টি অধিকতর গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, অনেক সাংবাদিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বিষয়ক আইন, নীতিমালা, কর্মপরিকল্পনা ইত্যাদি বিষয় জানেন না তাই সাংবাদিকদের প্রতিবন্ধিতা ইস্যুতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ধরণ, লিঙ্গ, স্থান এবং ভাষা ইত্যাদি বিবেচনায়পরিকল্পনা গ্রহণ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে সকলের সম্মিলিত
উদ্যোগ গ্রহণ, সেবার বিষয়ে অডিট করা, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটির কার্যকারিতা বৃদ্ধি, বাজেট বরাদ্দ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা, কুসংস্তার দূরীকরণে ধর্মীয় উপসনালয়ের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠনের সাথে সাংবাদিকদের সম্পৃক্তকরণ করা প্রয়োজন।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সহযোগী সংস্থা প্রতীক মহিলাও শিশু সংস্থা, প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থা (প্রকস) এবং রংধনু জেলা প্রতিবন্ধী অধিকার সংস্থার এবং সংস্থার কর্মীবৃন্দ। ভার্চুয়াল সভাটি অ্যাকসেস বাংলাদেশ এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা মহুয়া পাল এর ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়।
দুস্থ, অসহায়, বয়বৃদ্ধ ও কর্মহীন মানুষের মাঝে শীতবস্ত (কম্বল) বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র প্রেসিডেন্ট মোঃরেজাউল ইসলাম মিলন, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোঃ গোলাম জাকারিয়া পিন্টু,পরিচালক মোঃ আসলাম, আলী আহমেদ চান্দ, মোঃ নুরুল ইসলাম পটু, মোঃ আতিকউল্লাহ, সালাহ উদ্দিন মোস্তফা জামাল সুমন, মোঃ রুবায়েত হোসেন খান, ও মোঃজাকারিয়া ইসলাম প্রমুখ।