শনিবার দুপুরে ফেনী শহরের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স মোড় এলাকায় লাঠিসোঁটা ও ইট নিয়ে এই হামলা চালায় একদল যুবক।
হামলাকারীরা লংমার্চকারীদের ছয়টি বাস ভাংচুর করেছে। আহত হয়েছেন অনেকে। কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হামলার পর লংমার্চকারীরা নোয়াখালীর পথে রওনা হয়েছেন, যেখানে বিকালে সমাবেশের মধ্য দিয়ে দুদিনের এই কর্মসূচি শেষ হবে।
ফেনীতে হামলাকারীরা আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী বলে লংমার্চকারীদের অভিযোগ। তারা আরও বলছেন, হামলার সময় পুলিশ নীরব ভূমিকায় ছিল।
ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী গণজাগরণ তৈরির লক্ষ্যে শুক্রবার শাহবাগ থেকে নোয়াখালীর পথে এই লংমার্চ শুরু করে ‘ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’। বাম ছাত্র সংগঠনগুলো ছাড়াও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও নারী সংগঠন এতে যোগ দিয়েছে।
ধর্ষণের বিরুদ্ধে ‘লংমার্চ’ নোয়াখালীর পথে
‘আগামীর লড়াই হবে ধর্ষণের বিরুদ্ধে’
ঢাকা থেকে রওনা হয়ে বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করে শুক্রবার কুমিল্লাতে অবস্থান নিয়েছিল ৫ শতাধিক লংমার্চকারীরা; সেখানে থেকে শনিবার সকালে আসে ফেনীতে।
সকাল পৌনে ১০টায় লংমার্চ বহরটি ফেনীর শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়ক হয়ে শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশে মিলিত হয়। এসময় শহীদ বেদিতে তারা গণসংগীত ও পথনাটক উপস্থাপন করে।
বক্তব্য রাখেন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেহেদী হাসান নোবেল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি মাসুদ রানা, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আরেক অংশের সভাপতি আল কাদরী জয় প্রমুখ।
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেহেদী হাসান নোবেল বলেন, হামলাকারী বাসও ভাংচুর করে। এসময়ও অনেকে আহত হয়। পুলিশ এসময় নীরব ভূমিকায় ছিল।
হামলায় ৩০ জনের মতো আহত হয়েছেন বলে লংমার্চে থাকা উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন জানিয়েছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকাল ১০টার দিকে আমরা ফেনীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ শুরু করি। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সমাবেশ শেষ হয়।
“তারপর আমরা যখন বেগমগঞ্জের উদ্দেশে বাসে উঠতে যাই, তখন একদল যুবক, যারা, ছাত্রলীগ-যুবলীগের, তারা আমাদের উপরে অতর্কিতে হামলা করে। তাদের সঙ্গে পুলিশও যোগ দেয়।”
আহত ছাত্র ইউনিয়নকর্মী ইমা বলেন, “ডিবি পুলিশের পোশাক পরিহিত একজন আমাকে পিছন থেকে জোরে ধাক্কা দেয়। এতে আমি পড়ে কোমরে আঘাত পাই। পরে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা পুলিশের উপস্থিতিতে হামলা করে। পুলিশ নিশ্চুপ ছিল।”
আহত ছাত্র ইউনিয়নকর্মী আসমানি আশা বলেন, “পুলিশের ইশারায় ছাত্রলীগের কর্মীরা লাঠি ও লোহার রড নিয়ে হামলা করে। মিছিলের পেছন থেকে ইট, লোহার টুল ছুড়ে মারে। পুলিশ কিছুই করেনি।”
নাম প্রকাশে অনিচ্চুক ফেনীর এক ছাত্রফ্রন্ট নেতা বলেন, “ফেনী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদক শুশেন চন্দ্র শীলের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল প্রথমে ধাওয়া করা হয়। ওই মিছিল থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা করে।”
ফেনীর সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর সমর্থকরা এই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ এসেছে।
তিনি বলেন, “লংমার্চে অংশগ্রহণকারীরা শহরের জিরো পয়েন্টে এলাকায় থাকা প্রধানমন্ত্রী ও সাংসদ নিজাম হাজারীর ছবি সম্বলিত ফেস্টুনে বিরুপ মন্তব্য লিখে চিকা মারে।
“এতে সাধারণ মানুষ ক্ষুবধ হয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানায়। তবে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের কেউ হামলার সাথে জড়িত নয়।”
হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী মডেল থানার ওসি মো. আলমগীর হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “লংমার্চ’র সভা শেষে অংশগ্রহণকারীর ফেনী ত্যাগ করতে পুলিশ সহায়তা করেছে।
“বহিরাগত লোকজন লংমার্চে অংশগ্রহণকারীদের উপর হামলার চেষ্টা করেছে। তবে পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে।”
ফেনীর পর লংমার্চকারীদের দাগনভূঞায় সমাবেশের কথা ছিল। কিন্তু সেখানে বাম জোটের সমাবেশে হামলা হয়। এতে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয।
শনিবার দুপুরে পৌরসভার জিরো পয়েন্টে আতার্তুক স্কুল মার্কেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
দাগনভূঞা উপজেলা বাম জোটের সমন্বয়ক ডা. হারাধন চক্রবর্তী বলেন, “পুলিশের সামনে ছাত্রলীগের কর্মীরা হামলা করলেও পুলিশ নিরব ভূমিকা পালন করে।”
দাগনভূঞা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু নাসের চৌধুরী বলেন, “হামলার ঘটনার সাথে ছাত্রলীগের কোন নেতাকর্মী জড়িত নেই।”
দাগনভূঞা থানার ওসি আসলাম সিকদার জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।