শনিবার, ১০ জুন ২০২৩, ০১:৩৯ অপরাহ্ন

বস্তিতে আগুনে পুড়েছে প্রায় দেড়শ’ ঘর-দোকান

প্রতিবেদকের নাম:
  • আপডেট সময় : বুধবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২০

সকাল সোয়া ১১টা। ছাইয়ের গাদায় বিয়ের লাল বেনারসি এবং গতকাল নীল শাড়ির পোড়া অংশ উল্টেপাল্টে দেখছেন আর কাঁদছেন নববধূ বিউটি চন্দ্র বণিক। পাশেই স্বামী দোলন চন্দ্র তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। ভস্মীভূত আসবাবপত্রের মধ্যেও যদি অক্ষতা পাওয়া যায়, এই আশায় কেউ কেউ খুঁজছেন নিজের প্রিয় কোনো বস্তু। সোমবার দিবাগত রাতের আগুনে মহাখালীর সাততলা বস্তির প্রায় দেড়শ’ ঘর-দোকান পুড়ে গেছে। নিঃশেষ করে দিয়েছে বস্তিবাসী অনেককে। সব হারিয়ে মানুষগুলো অসহায় অবস্থায় পড়েছে।
বিউটি চন্দ্র জানান, দুই বছর এক মাস আগে আমাদের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। গত এক বছর ধরে বস্তিতে ভাড়া বাসায় থাকছি।

গতকাল শাড়ি, বিয়ের বেনারসি, দুই ভরি স্বর্ণ, সিঁদুর, নগদ ৪০ হাজার টাকা, মোবাইলফোন পুড়ে গেছে। হাতের ফোনটি চার্জে থাকায় সেটাও পুড়ে ছাই হয়েছে। কিছুই নিয়ে বের হতে পারিনি। স্বামী দোলন চন্দ্র বলেন, ২৮শ’ টাকা ভাড়ায় বস্তিতে এক কক্ষের একটি রুমে থাকতাম আমরা। স্থানীয় একটি পোলার ফ্যাক্টরিতে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে পণ্য লোড-আনলোডের কাজ করি।
আগুন লাগে যখন তখন আমি ফ্যাক্টরিতে ছিলাম। রাত পৌনে ১২টায় বস্তি থেকে অফিসে ফোন দিয়ে জানানো হয় বস্তিতে আগুন লেগেছে। এ সময় কাজ ফেলে সবাই বস্তিতে চলে আসি। এসে দেখি সব শেষ। চারদিকে শুধু পোড়া ছাইয়ের স্তূপ। বস্তিতে এসে আমার স্ত্রীকে জীবিত পাবো এটাও আশা করিনি। কারণ, বিউটিকে ফোন দিয়ে দেখি ফোন বন্ধ। তখন ভেবে নেই বিউটি আর বেঁচে নেই। এখানে এসে যখন তাকে দেখলাম যেন প্রাণ ফিরে পেলাম। বিউটি চন্দ্র বলেন, মাত্র ১০ মিনিটের মাথায় সব পুড়ে ছাই। আমরা শুধু দাঁড়িয়ে পোড়ার দৃশ্য দেখছি আর কাঁদছিলাম। প্লাস্টিকের পণ্যে, মুদি, মনোহারি, জুতা, মোবাইল ফোন, লেপ-তোষক ইত্যাদি মিলিয়ে চার মালিকের প্রায় ৩৫টির বেশি দোকান ছিল। সব পুড়েছে। আগুনের সূত্রপাত হয় একটি মুদি দোকানের ফ্রিজের সংযোগ থেকে। এছাড়া ১১৪টি ঘর পুড়েছে। দোলন চন্দ্র বলেন, গ্রাম থেকে সব হারিয়ে ঢাকায় এসেছি। এখন কোথায় যাবো। সকাল থেকে কিছুই খাওয়া হয়নি। স্থানীয় কাউন্সিলরের লোকজন আমাদের নামের তালিকা নিয়ে গেছে।
নিজের পোড়া ভিটায় দাঁড়িয়ে আছেন কিশোরী সুমাইয়া। পাশের ধ্বংসস্তূপে নিজের বই খুঁজছিলেন লিখন। যদি একটি বই অক্ষত থেকে যায়। বাবা বাবর আলী প্যারালাইজডস হওয়ায় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে আর নিয়মিত করতে পারেনি। স্থানীয় একটি গার্মেন্টে চাকরি নেয়। করোনার কারণে আপাতত চাকরি করছেন না সুমাইয়া। মা রিনা বেগম বাসাবাড়িতে কাজ করেন। মা-মেয়ের আয়ে চলে পাঁচজনের সংসার। পাশেই খালুর কোলে ঘুমাচ্ছে শিশু সুমি। সুমাইয়া বলেন, মেজভাই লিখন স্থানীয় একটি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। বাসার কিছুই বের করতে পারিনি। সবকিছু পুড়ে গেছে। কোনোভাবে প্রাণ নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেছি। সুমাইয়ার মা রিনা বলেন, স্থানীয় একটি মেস বাড়িতে রান্নার কাজ করি। এই মাসের বেতনের নগদ ১০ হাজার টাকা ছিল। সেটাও পুড়ে গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের তেজগাঁও স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মাহমুদুল হাসান বলেন, সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টায় আগুনের সূত্রপাত ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট একযোগে কাজ করে এক ঘণ্টার মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বস্তির ওই অংশের ৪০টির বেশি দোকান পুড়ে গেছে। তবে আগুন লাগার প্রকৃত কারণ এখনো জানা যায়নি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর মো. নাসির মানবজমিনকে বলেন, আগুনের ঘটনায় ৩৫টির মতো দোকান এবং ১১৪টি ঘর পুড়েছে। গত পাঁচ বছরে এই বস্তিতে অন্তত চার বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সাততলা বস্তি এলাকায় প্রায় আড়াই লাখ মানুষের বসবাস। রাতে খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা করা হয়েছে। তাদের থাকা এবং খাওয়ার ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। আগুন লাগার প্রকৃত কারণ এখনো জানা যায়নি। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই রকম আরো সংবাদ

© All rights reserved © 2020 Aplusnews.Live
Design & Development BY Hostitbd.Com

অনুমতি ছাড়া নিউজ কপি দন্ডনীয় অপরাধ। কপি করা যাবে না!!