বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ রংপুরের শঙ্কু সমজদার। ৭১’ এর ৩ মার্চ সারাদেশের মতো রংপুরেও হরতাল পালিত হয়। হরতালের পক্ষে বিক্ষোভ মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন শঙ্কু। তারপর থেকেই আজকের এই দিনটিকে শহীদ শঙ্কু দিবস পালন করে আসছে রংপুরের মানুষ।
সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো নিজ উদ্যোগে দিনভর নানা আয়োজন করে আসছেন। এই শহীদের নাম গেজেটভুক্ত হলেও সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে না তার পরিবার।
শঙ্কুর বৃদ্ধা মা দিপালী সমজদার বার্তাবাজারকে বলেন, একাত্তরের ৩ মার্চ সকালে খাবার মুখে না দিয়েই বাসা থেকে বেরিয়ে পড়েন বাবু ও শংকু দুভাই। বাবু তখন অষ্টম শ্রেণি আর শংকু ষষ্ট শ্রেণির ছাত্র। এছাড়াও তাদের সমবয়সী শরিফুল আলমও ছিলেন তাদের সাথে। শহরের প্রধান সড়কে আসতেই ‘জয় বাংলার’ মিছিল দেখে তারা তাতে যোগ দেন।
শহিদ শঙ্কুর সৃতি রক্ষায় দেশে একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
রংপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার মোসাদ্দেক হোসেন বাবলু বার্তাবাজারকে তিনি সেদিনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, “রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠ থেকে শুরু হওয়া মিছিলটি সকাল সাড়ে ৯টায় রেল স্টেশন হয়ে আবারও শহরের দিকে আসছিল। এ সময় স্টেশন রোড়ের একটি ভবনে ‘উর্দুতে’ লেখা একটি সাইন বোর্ড দেখে তা ভাঙতে যান শঙ্কু ও ছাত্রলীগ কর্মী শরিফুল।
তখনই ভবন থেকে বেড়িয়ে এসে অবাঙালি সরফরাজ খান তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন শঙ্কু ও শরিফুলে। হাসপাতাল নেয়ার পথেই মৃত্যু হয় শঙ্কুর, কিছুদিন পর শরিফুল ও মারা যান।”
কথা বলতে বলতে তার মা দীপালি সমাজদার কেঁদে বলেন, “বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে রংপুরের প্রথম শহীদের স্বীকৃতি পেলেও বীর মুক্তিযোদ্ধার খেতাব এখনো পাইনি। সরকারিভাবে তার স্মৃতি রক্ষায় কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। আমার বড় ছেলে কুমারেশ সমজদার ফুটপাতে পানের দোকান করে পরিবার-পরিজন নিয়ে কোনরকমে সংসার চালাচ্ছে। খুব কষ্টে দিনযাপন করলেও খোঁজ নেয়না কেউ।
তবে সম্প্রতি রংপুরে সঙ্কু সমাজদারের নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক উমর ফারুক।
তিনি আরও বলেন, তার মায়ের ইচ্ছে পূরন করবার জন্য বিবেকের তাড়নায় মনে হয়েছে তার নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করা দরকার সেজন্য আমরা উদ্যোগ নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরী করবার চেষ্টা করছি।
রংপুরবাসীর এখন দাবী শঙ্কু সমাজদারকে রাষ্ট্রীয় সৃকৃতি ও তার সৃতিচারণে রংপুরে বিশেষ উদ্যোগ নেয়ার।