রংপুরের মিঠাপুকুরে জমিজমার কাগজপত্র ঠিক করে দেওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে এক গৃহবধুকে দলবেঁধে ধর্ষণ করেছে একদল প্রতারক। এ ঘটনায় থানায় মামলা করলেও পুলিশ ধর্ষকদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। উল্টো মামলা তুলে নিতে ওই গৃহবধুকে হুমকী দিচ্ছে ধর্ষকরা। তাদের অব্যঅহত হুমকীর মুখে ওই গৃহবধু বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এদিকে, পৃথক আরেকটি ঘটনায় চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। তবে, অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশও সরেজমিনে ঘুরে এলাকাবারি সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার মির্জাুর ইউনিয়নের বাসিন্দা এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে বাড়িতে রেখে ঢাকায় শ্রমিকের কাজ করতেন।
কয়েক বছর আগে তারা জমি বন্ধক নেন পশ্চিম মুরাদপুর গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের কাছে। এই জমির কাগজপত্র ঠিক করে দেওয়ার কথা বলে তোফাজ্জল ও তার সহযোগিরা গৃহবধুকে জিম্মি করে গত ২২ নভেম্বর একটি বাড়িতে ডেকে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষন করে। সেই দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করে। এরপর ধর্ষনের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ২৭ নভেম্বর অঅবার গৃহবধুকে ধর্ষন করে।
মামলার বিবরণ এবং নিয়াতিতার অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, মিঠাপুকুর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম মুরাদপুর গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনে কাছে ৫ বছর আগে ৬৬ শতক জমি ২ লাখ টাকায় বন্ধক নেন গৃহবধু ও তার স্বামী। ওই সময় লিখিত স্ট্যাম্পও করে দেন তোফাজ্জল হোসেন। ওই সম্পত্তি গৃহবধু ও তার স্বামী ভোগদখল করে আসছেন। ১০ নভেম্বর জমিদাতা তোফাজ্জল হোসেন আরও ৪০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন তাদের কাছে (গৃহবধু ও স্বামী)। কিন্তু, স্ট্যাম্প করে দিতে টালবাহানা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তোফাজ্জল হোসেনের সহযোগী আবু তাহের ও রবিউল হাসান বিষু ওই গৃহবধুকে ৪০ হাজার টাকার ষ্ট্যাম্প লিখে নিয়ে নিতে সহায়তার কথা বলে ২ লাখ টাকার মুল ষ্ট্যাম্পটি তার কাছ থেকে হাতিয়ে নেন।
এরপর তোফাজ্জল হোসেনের সহযোগী আবু তাহের ও রবিউল হাসান বিষু ওই গৃহবধুকে কৌশলে ২২ নভেম্বর ও ২৭ নভেম্বর ডেকে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষন করেন। এর প্রতিবাদ করলে ২ লাখ টাকার মুল ষ্ট্যাম্পটি তাকে ফেরত দিবেনা মর্মে হুমকি দিয়ে জিম্মি করে প্রতারকরা আরও একাধিকবার ধর্ষন করে গৃহবধুকে। ওই গৃহবধু বৈরাতীহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে অভিযোগ করলে জড়িতরা ইউপি সদস্য বাদশা মিয়াকে হাত করে তার মাধ্যমে তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রাম্যভাবে সমাধান করার আশ্বাসে থামিয়ে রাখেন। কিন্তু অপরাধীরা ঘটনার স্থানীয়ভাবে সমাধানের আশ্বাস দিয়ে ওই গহবধুকে দুম্চিরিত্রা আখ্যায়িত করে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেয়। পরবর্তীতে ওই গৃহবধু মিঠাপুকুর থানায় ৩ জনের বিরুদ্ধে একাধিকবার ধর্ষনের অভিযোগে মামলা করেন।
ধর্ষিতা গৃবধুর ডাক্তারী পরীক্ষা হয়েছে বলে জানা গেছে। ইউপি সদস্য বাদশা মিয়অ বলেন, তার কাছে ওই গৃহবধু ধর্ষণের কথা বলেননি, শুধুমাত্র জমি বন্ধকীর মুল ষ্ট্যাম্প এবং ৪০ হাজার টাকা নেওয়ার কথা বলেছিলেন। তিনি শালিসের চেষটা করে শালিস না হওয়ায় আইনের আশ্রয় নিতে বলেছেন। গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার কথা তিনি জানেন না বলে জানান। অন্যদিকে, উপজেলার বড় হযরতপুর ইউনিয়নের চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। তবে, অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
মামলার অভিযোগ সুত্র ও এলাকাবাসি সুত্রে জানা গেছে, ছাত্রীটি গত ২৫ ডিসেম্বর সকালে অন্য শিশুদের সাথে বাড়ির বাইরে খেলা করছিল। পাশের বাড়িতে শিশুটি পানি খাওয়ার জন্য পাশের বাড়িতে যায়। এসময় পাশের সেরুডাঙ্গা খামার গ্রামের দুলু মিয়া (৪৫) শিশুটিকে পেছন থেকে জাপটে ধরে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। তার চিৎকারে অন্য শিশুরা দৌড়ে আসলে দুলু মিয়া পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে শিশুটির বাবা বাদি হয়ে থানায় একটি মামলা করেন। তবে, অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিরুজ্জামান বলেন, গৃহবধু ধর্ষনের ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামীরা পলাতক থাকায় গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে, গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনায় তিনি বলেন, মামলার একমাত্র আসামীকে ধরতে বিভিন্নস্থানে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করা হয়েছে। আশা করি খুব দ্রুত গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।
সূত্র: দৈনিক যুগের আলো