শুধুমাত্র মুক্তিপণের উদ্দেশ্যে অপহরণ করা হয় চট্টগ্রামের ইপিজেড থানার বন্দরটিলা এলাকার সোহেল রানার শিশু কন্যা আলিনা ইসলাম আয়াতকে। মুক্তিপণ আদায়ের সুযোগ না পেয়ে ছয় বছর বয়সী এ শিশুর লাশকে ছয় টুকরা করার পর তা কাট্টলী সাগরপাড়ে ফেলে দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় জড়িত আবির আলী (১৯) গ্রেফতারের পর এমন তথ্য দিলেও শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে কাট্টলী সাগড়পাড়ে গিয়ে আয়াতের খণ্ড-বিখণ্ড দেহের টুকরোগুলো মেলেনি। তবে ওই স্থান থেকে উদ্ধার করা হয় আয়াতের পোশাক ও জুতো। যেগুলো বুকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন আয়াতের বাবা সোহেল রানা। আর বলেন, আমার মেয়ে কি পৃথিবীর আলোয় আর হাসবে না। রাঙাবে না আমার পৃথিবী।
এমন তথ্য জানিয়েছেন পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক ইলিয়াস খান।
তিনি বলেন, ঘটনার পর সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে ২৪ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে আকমল আলী সড়ক থেকে আবির আলীকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে আয়াতকে হত্যার কথা স্বীকার করে।
আবির আলী জানায়, সোহেল রানার অনেক টাকা আছে ভেবে মুক্তিপণের উদ্দেশ্যে ঘটনার দিন বিকেলে আয়াতকে অপহরণ করে সে। পরে আয়াত চিৎকার করলে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। পরে আকমল আলী সড়কের বাসায় নিয়ে ছয় টুকরো করা হয়। তারপর কাট্টলীর সাগরপাড়ে ফেলে দেওয়া হয়।
গ্রেফতারের পর আবির আলী সব কিছু স্বীকার করে নেয়। মরদেহ টুকরো করার কাজে ব্যবহার করা বটি ও অ্যান্টি কাটার উদ্ধার করা হয়েছে আবির আলীর বাসা থেকে। এ
ইপিজেড থানার ওসি আব্দুল করিম জানান, গত ১৫ নভেম্বর চট্টগ্রামের ইপিজেড থানার বন্দরটিলার এলাকার নয়ারহাট বিদ্যুৎ অফিস এলাকার বাসা থেকে পার্শ্ববর্তী মসজিদে আরবি পড়তে যাওয়ার সময় নিখোঁজ হয় আলিনা ইসলাম আয়াত।
এর পরদিন শিশুর বাবা সোহেল রানা এ ঘটনায় ইপিজেড থানায় নিখোঁজের ডায়েরি করলেও কোন হদিস মিলেনি। অবশেষে নিখাঁজের ১০ দিন পর এ ঘটনার রহস্যের জট খুলে পিবিআই। এ ঘটনায় আয়াতের বাবার ডায়েরিকে মামলা হিসেবে নেওয়া হচ্ছে।
ওসি আরও বলেন, শিশু আয়াতের উদ্ধার করা জামা-জুতো নিয়ে সোহেল রানা ও তার স্ত্রীর বুকফাটা আর্তনাদ চলছে। আয়াতের মা-বাবা ও স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠছে আশপাশের পরিবেশ। আয়াতের স্বজনেরাও উদ্ধার করা জুতা, জামা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে মূর্ছা যাচ্ছেন।
শিশু আয়াতকে অপহরণ ও নির্মমভাবে খুনের ঘটনায় ইপিজেডসহ পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
স্থানীয়দের ভাষ্য, ৬ বছরের শিশুকে নির্মমভাবে খুন জাহিলিয়াতকেও হার মানিয়েছে। এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছেন এলাকাবাসী।
পিবিআই চট্টগ্রামের এসপি নাঈমা সুলতানা বলেন, ২৪ নভেম্বর সিপিজেডের আকমল আলী রোডের পকেট গেট এলাকা থেকে আবির আলীকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর আয়াতকে হত্যার কথা স্বীকার করে সে।
আয়াতের বাবা সোহেল রানা বলেন, আবির আলী আমার বাবার বাড়িতে ভাড়াটিয়া ছিলেন। কিন্তু ওই সময় কোনো বিষয় নিয়ে আবির আলীর সঙ্গে মনোমালিন্যের ঘটনা ঘটেনি। তার সঙ্গে আমাদের তেমন কোনো সম্পর্কও নেই। মুক্তিপণের টাকা আদায়ের জন্য সে এতবড় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটাবে তা চিন্তারও বাইরে। টাকা লাগলে তো সে আমাকে বলতে পারতো বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।