শনিবার, ১০ জুন ২০২৩, ০১:২২ অপরাহ্ন

রংপুরে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে মিথ্যা বলাৎকার মামলা করার অভিযোগ

প্রতিবেদকের নাম:
  • আপডেট সময় : বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২০

জমিজমা নিয়ে বিরোধ। এর জের ধরে প্রতিপক্ষের স্কুল পড়–য়া ছেলের সাথে ক্রিকেট খেলার মাঠে ষ্টাম্প কেড়ে নেয়ার ঘটনা ঘটে। থানায় অভিযোগ দেওয়া হয় বলাৎকারের। তদন্ত ছাড়াই পুলিশ মামলা নেয় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে। প্রতিপক্ষের অভিযোগ তার ছেলের বিরুদ্ধে “মিথ্যা” মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। মামলার ফাঁদে ফেলে বাদি হাতিয়ে নিয়েছে দুই লক্ষাধিক টাকা।রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার সিট ঠাকুরাদহ গ্রামে গত সেপ্টেম্বর মাসে এ ঘটনা ঘটে।

মামলার বাদি একই গ্রামের বাবুল মিয়া (৫৫)। তিনি গত ২১ সেপ্টেম্বর গঙ্গাচড়া মডেল থানায় মামলাটি করেন। মামলায় বাবুল মিয়ার প্রতিপক্ষ বাদশা মিয়ার ৯ম শ্রেণীতে পড়–য়া ছেলে ইমরানকে আসামী করা হয়েছে।

বাবুল মিয়া মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, ঘটনার দিন সকাল ১০ টার সময় তার নাতি শিশু সাব্বির হোসেন (০৬) কেরু মিয়ার জমিতে খেলতেছিল। ঐ দিনই পৌনে ১১ টার সময় সেখান থেকে প্রতিপক্ষ বাদশা মিয়ার ছেলে ইমরান (১৬) তার নাতিকে ডেকে নিয়ে তার দাদী শাহেবজোন (৬০) এর বসত বাড়িতে জোর পূর্বক বলাৎকার করে। এ সময় নাতি সাব্বির হোসেন (০৬) কান্নাকাটি শুরু করলে ইমরান পালিয়ে যায়।

এজাহারে বাদি বলেছেন, ভিকটিম সাব্বির কেরু মিয়ার জমিতে খেলতেছিল সেখান থেকে তাকে ইমরান ডেকে নিয়ে গেছে। আর ভিকটিম সাব্বির তার ২২ ধারার জবানবন্দিতে বলেছেন, ঘটনার দিন ও সময়ে ইমরানসহ অনেক ছেলে ক্যারাম খেলছিল, আমি ক্যারাম খেলা দেখতে গেলে ইমরান আমাকে ডেকে নিয়ে গেছে। এজাহার ও ভিকটিমের জবানবন্দি মিল না থাকায় এলাকাবাসির মধ্যে দেখা দিয়েছে নানান প্রশ্নের। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসি ও মিথ্যা মামলার শিকার ভূক্তভুগি বাদশা মিয়ার পরিবারের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে চাপা ক্ষোভ।

মামলার স্বাক্ষী করা হয়েছে ঘটনা স্থলের পাশের বাড়ির মিনা বেগম (৫০) নারগিস বেগম (৩৫) বাদির ছেলে ও আত্মীয়স্বজনকে।সিট ঠাকুরাদহ গ্রামের এলাকাবাসী বলেন, বাদি বাবুল মিয়া ও প্রতিপক্ষ বাদশা মিয়ার সাথে দির্ঘদিন ধরে জমিজমা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিরোধ। এলাকায় বাদশা মিয়াকে সমভ্রান্ত পরিবারের সন্তান হিসেবে সমাজের সবাই তাকে সম্মান করেন। সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য বাবুল মিয়া মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন।মামলার ঘটনা সম্পর্কে এলাকাবাসী বলেন, গত ২১/০৯/২০২০ ইং বাদশার মিয়ার ছেলে ইমরান (১৬)সহ বেশ কয়েকজন ছেলে সকাল ১০ টার দিকে জৈনক কেরু মিয়ার জমিতে ক্রিকেট খেলার সময় বাবুল মিয়ার নাতি ভিকটিম সাব্বির হোসেন (০৬)

ক্রিকেট খেলার ষ্টাম্প মাটি থেকে উঠিয়ে দৌড় দিয়ে নিয়ে যায়। এ সময় ইমরান দৌড়ে গিয়ে সাব্বিরের কাছ থেকে ষ্টাম্প কেড়ে নেয়। এতে সাব্বির কান্না শুরু করে। এ সময় বাবুল মিয়া ঘটনা স্থলে এলে বাদশা মিয়ার ছেলে ইমরানের সাথে বাবুল মিয়ার বাক বিতন্ডার ঘটনা ঘটে।এ দিকে মামলার বাদি বাবুল মিয়া প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করে প্রতিপক্ষ বাদশা মিয়াকে ঘায়েল ও তার ছেলে ইমরানের সুন্দর ভবিষ্যতকে নষ্ট করতে ষড়যন্ত্র মুলক পুলিশের সাথে যোগসাজস করে গত ২১/০৯/২০২০ ইং গংগাচড়া মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ (সংশোধনী/০৩) এর ৯(১) ধারায় স্কুল পড়–য়া নাবালক ইমরানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। ফলে মিথ্যা মানহানিকর ঘটনার অপবাদ ও ধর্ষণ মামলার আসামী হয়ে বাড়ি ও লেখাপড়া ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে ৯ম শ্রেণীর ছাত্র কিশোর ইমরানকে।

মামলায় বর্ণিত ঘটনাস্থল দেখানো হয়েছে শাহেবজোনের (৬০) বসতবাড়ির উত্তর দুয়ারী টিনের ঘরে। ঘটনার দিন ও সময়ে শাহেবজোন ঐ বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন বলে সাংবাদিকদের জানান। তিনি আরও জানান মামলায় বর্ণিত এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটে নাই মামলাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। এই মামলার আরোও দু’জন স্বাক্ষী মিনা বেগম (৫০) ও নারগিস বেগম (৩৫) ঘটনার দিন ও সময়ে বাড়িতেই ছিলেন। তারাও বলেন,মামলায় বর্ণিত এ ধরণের কোন ঘটনা ঘটে নাই। এজাহারে স্বাক্ষী হিসেবে নাম থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, এজাহারকারী বাবুল, গ্রামের কোন লোক বা পুলিশ আমাদেরকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে নাই এবং আমরা শুনিও নাই। এজাহারকারী শুত্রæতা সৃষ্টির জন্য আমাদের নাম স্বাক্ষী হিসেবে লিপিবদ্ধ করেছেন।

 

প্রতিপক্ষ বাদশা মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, আমি ঘটনার পরের দিন ২২ সেপ্টেম্বর স্থানীয় দৈনিক প্রথম খবর পত্রিকায় প্রকাশিত “থানায় অভিযোগ গঙ্গচড়ায় শিশু বলাৎকারের চেষ্টা” শিরোনামের মাধ্যমে জানতে পারি আমার ছেলে ইমরানের বিরুদ্ধে বলাৎকারের মামলা হয়েছে। পুলিশ কিভাবে নারী ও শিশু নির্যাতনের মত স্পর্শকাতর মামলা তদন্ত ছাড়াই মামলা রুজু করলো। টাকা হলেই কি মিথ্যা মামলা করা যায়। তাহলে আমরা সাধারণ মানুষ কার কাছে গিয়ে ন্যায় বিচার পাবো। আমার ছেলের সুন্দর ভবিষ্যৎ নষ্ট করার জন্য দায়ী কে! এ দিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই নূর মোহাম্মদ আরিফ গত ১৫ নভেম্বর ইমরানকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ (সংশোধনী-০৩) এর ৯(১) ধারায় অভিযুক্ত করে দোষীপত্র বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করেছেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই নূর মোহাম্মদ আরিফ বলেন, আমি দোষীপত্র আদালতে প্রেরণ করেছি, এজাহার ও ভিকটিমের জবানবন্দি মিল না থাকা ও ঘটনাস্থলে এজাহার নামীয় স্বাক্ষীদের উপস্থিতিতে ঘটনা সংঘঠিত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন এসব বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করবো না যা বলার আমি কোর্টে বলবো। মামলা বাদি বাবুল মিয়ার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলে তার ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। #####

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই রকম আরো সংবাদ

© All rights reserved © 2020 Aplusnews.Live
Design & Development BY Hostitbd.Com

অনুমতি ছাড়া নিউজ কপি দন্ডনীয় অপরাধ। কপি করা যাবে না!!