রংপুরে শতাব্দির সেরা বর্ষণে শত শত পুকুর, খাল ও নাছনিয়া বিলের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। মৎস্য চাষীদের দাবি প্রায় কয়েক কোটি টাকার মাছ বর্ষণে বের হয়ে গেছে। পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ায় কয়েকশ মৎস চাষি পুঁজি হারিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। অনেকে লীজ নিয়ে মাছ চাষ করায় এবার টানা বর্ষণে মাছ বের হয়ে যাওয়ায় লাভ তো দূরের কথা পুজি নিয়ে মাথায় হাত দিয়েছেন। তারা ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে মৎস চাষে সরকারের নিকট ভতুর্কি দাবি করেছেন। নগরীর চিকলী, কুকরুল ও চকচকার বিলেরও অবস্থা একই। এছাড়াও অনেকে পুকুর লীজ নিয়ে মাছ করতে গিয়েও পুজি হারাতে বসেছেন।
রংপুর নগরীর নাছনিয়া বিল লিজ নিয়ে মাছ চাষ করছেন আজমল উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি। গত কয়েকদিনের টাকা বর্ষণে এই বিলের মাছ ভেসে গেছে। তার দাবি মাছ ভেসে যাওয়ায় তার প্রায় কয়েক কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের নিকট লীজ নিয়ে তিনি মাছ চাষ শুরু করেছিলেন। প্রায় ৮০ লাখ টাকার মাছ ছেড়েছেন বিলে। অনেক মাছ বড়ও হয়ে গিয়েছিল। সব মাছ বের হয়ে যাওয়ায় তিনি পথে বসার উপক্রম। তার মত কয়েক শত মৎস খামরী অতিবর্ষণের ফলে পথে বসেছেন।
পূর্ব শালবনের আজমল উদ্দিন জানান, বিল তৈরি, মাছের খাবার, বিল নিরাপত্তার লোক রাখা ও মাঝে মাঝে মাছের পরিচর্যায় কোটি টাকার মতো খরচ হয়েছে। অনেক মাছ বিক্রির উপযোগি হয়ে পড়েছিল। সব আমার শেষ হয়ে গেল। এখন ভর্তুকি ছাড়া আমার জীবন বাচাই দায়। শুধু নাছনিয়া নয় কুকরুল, চকচকা বিলের মতো অসংখ্য পুকুরের পাড় উছলিয়ে মাছ বের হয়ে গেছে। ফলে শতশত মৎসজীবী পুঁজি হারিয়ে চোখে মুখে অন্ধকার দেখছে। মৎস চাষীদের বের হয়ে যাওয়া মাছগুলো বিভিন্ন জলাশয়, প্রধান সড়ক, বিভিন্ন বাসাবাড়ি, পুকুর ও খাল থেকে অনেকেই জাল দিয়ে ধরে বিক্রি করছে।
আবহাওয়া অফিসের সূত্র মতে গত শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩৩ মিলিমিটার। এসময় ভারি বর্ষণে খাল বিল পুকুরের পানি উপচে পড়ে। ফলে পুকুর, খাল বিলের মাছগুলো অন্যত্র চলে গেছে।
মৎস্য খামারী নজরুল ইসলাম মনু জানান, তার দুটি পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। এতে তার ৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে । এই ক্ষতির ফলে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
কল্যানি ইউনিয়নের নজরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আমার মাছের দুটি ঘের পানিতে ভেসে গেছে। এ ক্ষতি কিভাবে পোষাবেন এনিয়ে তিনি চিন্তিত।
কুকরুল বিলের ইজারাদার লোকমান হোসেন জানান, তার বিলের সব মাছ ভেসে গেছে। এতে তার ৬০-৬৫ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।
রংপুর বিভাগীয় মৎস অফিসের উপ পরিচালক মোঃ সাইনার আলম বেসরকারি পর্যায়ে খামারীদের চাষ করা মাছ ভেসে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে মৎস কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ভারি বর্ষণ ও বন্যায় কয়েক কোটি টাকার মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের কাজ চলমান রয়েছে। তিনি মৎস চাষে ক্ষতিগ্রস্তদের ভর্তুকির বিষয়টি সরকারকে ভেবে দেখার অনুরোধ জানাবেন।