বুধবার, ৩১ মে ২০২৩, ১০:৪৩ পূর্বাহ্ন

রংপুরে মডেল মসজিদের কাজ শেষপ্রান্তে, উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

প্রতিবেদকের নাম:
  • আপডেট সময় : রবিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২০

রংপুরে নির্মাণাধীন মডেল মসজিদগুলোর মধ্যে পাঁচটির নির্মাণ কাজ এখন শেষপ্রান্তে। আগামী দুই মাসের মধ্যে টাইলস ও পলেস্তারা ফিনিশিংসহ অন্যান্য কাজও সম্পন্ন হবে। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে আগামী বছরের মার্চে সারাদেশে ৫০টি মডেল মসজিদের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরমধ্যে রংপুরের পাঁচটি মডেল মসজিদ রয়েছে।

এদিকে মসজিদ উদ্বোধনের জন্য দিনে-রাতে দুই শিফট কাজ করছে নির্মাণ শ্রমিকেরা। নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করাতে গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা তদারকি বাড়িয়েছে। উদ্বোধনের তালিকায় রয়েছে রংপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকা ছাড়াও রংপুর সদর উপজেলা, মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ ও বদরগঞ্জের নির্মাণাধীন মডেল মসজিদ। দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলা এসব মসজিদের নির্মাণ কাজ করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর।

 

ইসলামি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য প্রসারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে আগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্পের আওতায় রংপুরসহ দেশের প্রত্যেকটি জেলা ও উপজেলায় মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হচ্ছে। আর এটি বাস্তবায়ন করছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা)।

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, রংপুরে নগরের কাচারি বাজার রোডে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে নির্মাণাধীন মডেল মসজিদ কমপ্লেক্সটির কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে হাড়ভাঙা শ্রম দিচ্ছেন নির্মাণ শ্রমিকেরা। কেউ ব্যস্ত পলেস্তারা নিয়ে। কেউবা ব্যস্ত ফিনিংশ আর ইলেকট্রিক কাজে। সেখানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ কাজ দেখভাল করার দায়িত্বে থাকা নাঈম ইসলাম জানান, ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পর শুরু হয় মসজিদ নির্মাণের কাজ।

করোনাকালে রড-সিমেন্ট, পাথরসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রীর সংকট ছিল। পাশাপাশি নির্মাণ শ্রমিকেরাও করোনা ঝুঁঁকি রোধে ঠিক মতো কাজ করতে পারেনি। তবে এখন পুরোদমে কাজ চলছে। দুইশ শ্রমিক নিয়ে টাইলস ও পলেস্তারা ফিনিশিংসহ অন্যান্য কাজগুলো দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে।

এদিকে রংপুর জেলা সদর এলাকা ছাড়াও সদর উপজেলার পাগলাপীরে, পীরগঞ্জের লালদিঘীতে, মিঠাপুকুরের উপজেলা পরিষদ চত্বরে এবং বদরগঞ্জের উপজেলা পরিষদ চত্বরের পাশে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। রংপুর মহানগরের মসজিদটি চারতলা বিশিষ্ট হলেও উপজেলা পর্যায়ে থাকা মডেল মসজিদগুলো হচ্ছে তিনতলা।
মার্চে সারাদেশে ৫০টি মসজিদের উদ্বোধন:

গণপূর্ত অধিদপ্তর রংপুর জোন সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে মোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ ছাড়াও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করছে বর্তমান সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় রংপুরে এসব মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। এরজন্য জমির ধরণ ভেদে প্রতিটি মসজিদ নির্মাণের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় হচ্ছে ১২ থেকে ১৬ কোটি টাকা। প্রতিটি জেলা ও উপজেলাতে একই আদলে মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। জেলা সদরে নির্মিত মসজিদগুলো হচ্ছে চারতলা এবং উপজেলায় হচ্ছে তিনতলা কমপ্লেক্স।

এসব মসজিদ হবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। নারী-পুরুষদের জন্য আলাদা অজু ও নামাজের ব্যবস্থা থাকবে। থাকবে গ্রন্থাগার, সম্মেলন কক্ষ ও গবেষণা কেন্দ্র
এ ছাড়া অসুস্থ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা সিঁড়ি থাকবে। শিশুদের জন্য শিক্ষা সুবিধা থাকবে। অতিথি ও বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণ সুবিধাও রাখা এ হবে মসজিদে। এছাড়া মৃতদেহ গোসল করানো এবং হজযাত্রী ও ইমামদের প্রশিক্ষণের সুবিধাও থাকবে। মসজিদের খতিব, ইমাম, মোয়াজ্জেন, খাদেম সকলেই সরকারি বেতনভুক্ত হবেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে এসব মসজিদ পরিচালিত হবে।

এদিকে মডেল মসজিদ নির্মাণ কার্যক্রমকে সরকারের একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত হিসেবে অ্যাখা দিয়ে পাগলাপীর এলাকার মহিউদ্দিন মখদুমী বলেন, বাংলাদেশে ইসলামের প্রচার প্রসারে যদি কখনো কোনো সরকারের ইতিহাস লিখতে হয়, সেখানে বর্তমান সরকারের এই মডেল মসজিদ নির্মাণ উঠে আসবে। একসঙ্গে সারাদেশে একই আদলে এরকম মসজিদ নির্মাণ একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। ধর্মপ্রাণ মানুষেরা সরকারকে আজীবন মনে রাখবে।

রংপুর নগরের তাঁতীপাড়া এলাকার বর্নালী জামান বর্ণা বলেন, আমি আনন্দিত সারাদেশের মতো রংপুরেও অনেকগুলো মডেল মসজিদ নির্মাণ হচ্ছে দেখতে পেরে। এখানে নারী-পুরুষ সবাই নামাজ আদায় করতে পারবে। মসজিদের ধর্ম শিক্ষার পাশাপাশি অনেক কিছু শেখার ও দেখার সুযোগ থাকবে। এ ধরণের সিদ্ধান্ত প্রসংশার।
বদরগঞ্জ উপজেলার আশরাফুল ইসলাম বলেন, মডেল মসজিদের কাজ দেখে ভালো লাগছে। এমন মসজিদ সব উপজেলার থাকবে, এটা সরকারের একটা ভালো সিদ্ধান্ত। এসব মসজিদ ইসলামের প্রচার প্রসারে অবদান রাখবে।

এদিকে রংপুর গণপূর্ত জোনের রক্ষণাবেক্ষণ উপ-বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী-১ মোঃ নূর আলম প্রামানিক জানান, মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০২১ সালের ১৭ মার্চের আগে দেশে ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এ তালিকায় রংপুরের জেলা সদর ও উপজেলা সদর, মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ ও বদরগঞ্জ উপজেলার মডেল মসজিদ রয়েছে। এসব মসজিদের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আশা করা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করবেন। এরপর নামাজের জন্য মসজিদগুলো উন্মুক্ত করা হবে।

অন্যদিকে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলো ইসলাম শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করছেন স্থানীয় ইসলামি চিন্তাবিদরা। রংপুর নগরীর আশরাফিয়া জামে মসজিদের খতিব ইঞ্জিনিয়ার মুশফিকুর রহমান বলেন, সরকারের এই প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন হলে মডেল মসজিদকে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্পের বিকাশের পাশাপাশি ধর্মীয় প্রচার-প্রচারণা আরও বাড়বে। শুধু তাই নয় আলেম-উলামাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফরম হিসেবে বিবেচিত হবে সরকারের এই প্রকল্প।
উল্লেখ্য, মসজিদভিত্তিক সমাজের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে ইসলামি মূল্যবোধের প্রসার ও ইসলামি সংস্কৃতি বিকাশের উদ্দেশ্যে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান সরকার।

এতে দেশীয় সম্পদ ব্যবহার করে সম্পূর্ণ বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে এসব মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে। এতে মোট ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
শুরুতে প্রকল্পটি সৌদি অর্থায়নে হওয়ার কথা ছিল। পরবর্তীতে সৌদি আরব এ বিষয়ে নিরব থাকায় সরকার ধর্ম মন্ত্রণালয় নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্পের কাজ শুরু করছে। ইতোমধ্যে ৫৬০টি মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মধ্যে ৪০০টির কাজ শুরু হয়েছে। যার বেশির ভাগের কাজ শেষের দিকে।

সূত্র: দৈনিক দাবানল

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই রকম আরো সংবাদ

© All rights reserved © 2020 Aplusnews.Live
Design & Development BY Hostitbd.Com

অনুমতি ছাড়া নিউজ কপি দন্ডনীয় অপরাধ। কপি করা যাবে না!!