দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে রুমানা খাতুন(২১) নামের এক গৃহবধূ নির্যাতনের শিকার হয়ে হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, যৌতুকের টাকার জন্য ওই গৃহবধূকে ঘরে আটকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পিটিয়েছেন মাদকাসক্ত স্বামী ও তাঁর পরিবারের লোকজন।
গত ১লা জানুয়ারী সন্ধ্যায় শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোলা জখম নিয়ে রুমানা খাতুন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। এ ঘটনায় গতকাল শুক্রবার গৃহবধূর বড় বোন রেবেকা সুলতানা বাদী হয়ে মশিউর রহমানকে আসামি করে চিরিরবন্দর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রুমানার বাড়ি চিরিরবন্দর উপজেলার দক্ষিন নশরতপুর গ্রামে। তাঁর বাবা আব্দুর রাজ্জাক পেশায় দিনমজুর। ৭ বছর আগে একই উপজেলার দক্ষিন আব্দুলপুর নাপিতপাড়া গ্রামের রিয়াজুল ইসলামের ছেলে মশিউর রহমান (৩৫) সঙ্গে রুমানার বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর মশিউর রহমান মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। তাদের ঘরে ৬ বছেরর পুত্র সন্তান রয়েছে। রুমানার কাছ থেকে টাকা নিয়ে নেশা করতেন। টাকা দিতে না পারলে চলত শারীরিক নির্যাতন।
গত বৃহস্পতিবার বাবার বাড়ি থেকে দুই লাখ টাকা যৌতুক আনতে বলেন মশিউর । এতে রাজি না হওয়ায় ওই দিন রাতে ঘরে আটকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে স্বামী, শশুর শ্বাশুড়ি রুমানার দুই হাত, পা ও ঊরুতে জখম করে ঘরে আটকায় রাখে।
বাবার বাড়ীর লোকজন খবর পেয়ে বোন ফুফু ও চাচী হাসপাতালে ভর্তি করার উদ্দেশ্যে মশিউরের বাড়িতে গেলে তাদেরকেও আটকিয়ে রেখে লাঞ্ছিত করে। এরপর চিরিরবন্দর থানায় অভিযোগ করলে থানা পুলিশ গিয়ে রুমানা কে উদ্ধার করে চিরিরবন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।
শনিবার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, রুমানা বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্ত জমাট বেঁধে আছে।
রুমানা বলেন, ‘আমি স্কুলে পড়তাম। বাবা মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতো। বাবা না বুঝে আমাকে বিয়ে দিয়েছেন। বিয়ের পর স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়ে আমার স্বামী পাঠ্যবই আগুনে পুড়িয়েছে। তবু ঢাকায় গিয়ে চাকরি করলাম। মাস শেষে বেতনের সব টাকা নিয়ে স্বামী নেশা করত, মারত। কান্নাকাটি করে বাড়িতে আসলাম। এখন দুই লাখ টাকা যৌতুক চায়। ব্যবসা করবে। আমার বাবা গরিব। টাকা কোথায় পাবে? টাকা না আনায় খুব মেরেছে।
রুমানার স্বামী মশিউর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি কথা বলতে রাজী হননি।
চিরিরবন্দর থানার ওসি সুব্রত কুমার সরকার বলেন, অভিযোগটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(সূত্র:দৈনিক যুগের আলো)