বুধবার, ৩১ মে ২০২৩, ১১:৩১ অপরাহ্ন

লড়াকু হয়ে প্রবেশ,আলোর গতিতে প্রস্থান

এপ্লাস অনলাইন
  • আপডেট সময় : বুধবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৩

 

পায়ের জোর কমে এসেছিল। চলাফেরা হুইল চেয়ারে। এই বয়সী মানুষের গণ্ডি থাকে ঘর-পরিবারেই। তবে ব্যক্তিটি যে জাফরুল্লাহ! তার বেলায় কি আর নিয়ম খাটে! মুক্তিযুদ্ধের আগুনজ্বলা সময়ে চিনিয়েছিলেন জাত। সে সময় তরুণ জাফরুল্লাহ পড়েন ব্রিটেনের মেডিকেলে। পাকিস্তানি পরিচয় ভাঙ্গতে ছিঁড়ে ফেলেন পাসপোর্ট। সেই যে শুরু। জীবন সায়াহ্নেও প্রশ্ন তুলেছেন ক্ষমতার বিরুদ্ধে, প্রতিবাদ করেছেন অনিয়মের। মুখে কথা না বলতে পারলেও তার শারীরিক উপস্থিতিই ছিল বড় প্রতিবাদ। তবে আর থাকবেন না তিনি। তার উপস্থিতি, তার স্বর পাবে না বাংলাদেশ। মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) রাত আনুমানিক ১০টা ৪০ মিনিটে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান এই গণমানুষের ডাক্তার বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান সমন্বয়কারী ডা. মামুন মোস্তাফী মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

মঙ্গলবার রাতে জধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকাকালীন মৃত্যুবরণ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জন্ম ১৯৪১ সালের ২৭ ডিসেম্বর। তিনি একজন বাংলাদেশি চিকিৎসক, জনস্বাস্থ্য সক্রিয়তাবাদী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র নামক স্বাস্থ্য বিষয়ক বেসরকারি সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৮২ সালে প্রবর্তিত বাংলাদেশের ‘জাতীয় ঔষধ নীতি’ ঘোষণার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

জাফরুল্লাহর জন্ম ১৯৪১ সালের ২৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলার রাউজানে। তার বাবার শিক্ষক ছিলেন বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্যসেন। পিতামাতার দশজন সন্তানের মধ্যে তিনি সবার বড় । ঢাকার বকশীবাজারের নবকুমার স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন এবং ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট উত্তীর্ণের পর তিনি ১৯৬৪ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস এবং ১৯৬৭ সালে বিলেতের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস থেকে এফআরসিএস প্রাইমারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

মুক্তিযুদ্ধে অবদান

 

বিলেতের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস-এ এফআরসিএস পড়াকালীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি চূড়ান্ত পর্ব শেষ না-করে লন্ডন থেকে ভারতে ফিরে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার নিমিত্তে আগরতলার মেলাঘরে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে গেরিলা প্রশিক্ষণ নেন এবং এরপরে ডা. এম এ মবিনের সাথে মিলে সেখানেই ৪৮০ শয্যাবিশিষ্ট “বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল” প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন। তিনি সেই স্বল্প সময়ের মধ্যে অনেক নারীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য জ্ঞান দান করেন যা দিয়ে তারা রোগীদের সেবা করতেন এবং তার এই অভূতপূর্ব সেবাপদ্ধতি পরে বিশ্ববিখ্যাত জার্নাল পেপার “ল্যানসেট”-এ প্রকাশিত হয়।

পুরস্কার ও সম্মাননা

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ১৯৭৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও তিনি ফিলিপাইন থেকে রামন ম্যাগসাইসাই (১৯৮৫) এবং সুইডেন থেকে বিকল্প নোবেল হিসাবে পরিচিত রাইট লাভলিহুড (১৯৯২), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ইন্টারন্যাশনাল হেলথ হিরো’ (২০০২) এবং মানবতার সেবার জন্য কানাডা থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন। ২০২১ সালে আহমদ শরীফ স্মারক পুরস্কার পান।

মৃত্যু

ঢাকার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) রাতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরেই কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই রকম আরো সংবাদ

© All rights reserved © 2020 Aplusnews.Live
Design & Development BY Hostitbd.Com

অনুমতি ছাড়া নিউজ কপি দন্ডনীয় অপরাধ। কপি করা যাবে না!!