সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। অসংখ্য রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানি সরাতে কয়েকটি সড়ক কেটে ফেলা হয়েছে। রোববার সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার শুরুতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা জানান স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, কিছু রাস্তা কাটার প্রয়োজন পড়েছে বলে জানিয়েছেন মেয়র। এতে পানি সহজে নেমে যাচ্ছে। কোথাও প্রয়োজনে আরও রাস্তা কেটে ফেলা হবে।
রাজধানীতেও বন্যা সতর্কতা আছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘বন্যা হবে, সেই সতর্কতা আছে, কিন্তু কী অবস্থায় যাবে বা বন্যা কতটুকু হবে, সেই পূর্বাভাস কোনো প্রতিষ্ঠান এখনও দেয়নি।
তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের কাছে খালের দায়িত্ব হস্তান্তর এবং অবৈধ দখলমুক্ত করার সুফল মিলছে। ঢাকার জলাবদ্ধতা কমেছে। ঢাকার ২ সিটি করপোরেশনের কাছে ইতোমধ্যে ২৬টি খাল হস্তান্তর করা হয়েছে। দক্ষিণ সিটি সাড়ে ৬ একর জমি এবং উত্তর সিটি ২৫ একর জায়গা দখলমুক্ত করেছে খালের।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, পানি বাড়ছে, আর পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। জেলার লক্ষাধিক মানুষ এখন পানিবন্দী। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত আছে।
প্রশাসন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলার ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি খারাপ। ছাতক পৌর শহরে এখন হাঁটুপানি। ছাতক শহরের সঙ্গে সব ইউনিয়নের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ২৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
মানুষের বাড়িঘর, দোকান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিস—সর্বত্রই এখন বন্যার পানিতে প্লাবিত। একই অবস্থা দোয়ারাবাজার উপজেলার। এ উপজেলা সদরের সঙ্গে সব ইউনিয়নে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার পৌরসভাসহ সব কটি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত।
জেলা সদরের সঙ্গে বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, দোয়ারাবাজার, ছাতক উপজেলা সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। পানি বাড়া অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যার পানি ঢুকছে মানুষের বাড়িঘরে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষ।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন আন্তরিকভাবে কাজ করছে। যাদের বাড়িঘরে পানি উঠেছে, তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নতুবা নিরাপদ স্থানে চলে আসতে বলা হচ্ছে। খাদ্যসংকট দূর করতে দেওয়া হচ্ছে ত্রাণ সহায়তা। সেনাবাহিনী দ্রুত উদ্ধার তৎপরতা শুরু করবে।
স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও বন্যাকবলিত মানুষেরা জানিয়েছেন, সিলেট নগরের অন্তত ২০টি এলাকার পাশাপাশি জেলার কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, সদর, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ছয় শতাধিক গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এসব এলাকায় বেড়েছে জোঁক, সাপ ও পোকামাকড়ের উপদ্রব। চলাচলের জন্য মিলছে না নৌকা। ফলে জরুরি প্রয়োজনে কেউ ঘরের বাইরে বেরোতে পারছেন না।
একাধিক জনপ্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক উপচে পানি তীব্র বেগে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে এ সড়কে ঝুঁকি নিয়ে সীমিত পরিসরে যান চলাচল করছে। অন্যদিকে সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় গোয়াইনঘাট উপজেলাও জেলা শহরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।