শনিবার, ১০ জুন ২০২৩, ০১:০২ অপরাহ্ন

১৭ দিন বয়সের শিশুকে হত্যার কথা স্বীকার করলো মা

প্রতিবেদকের নাম:
  • আপডেট সময় : শনিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২০

বিভিন্ন নাটকীয়তার অবসান ঘটিয়ে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে চাঞ্চল্যকর ১৭দিন বয়সী শিশু হত্যার জট খুলেছে। বাবা, চাচা ও ফুফা কেউ নয় শান্তা আক্তার পিংকিই হত্যা করেছে তার ১৭দিনের নবজাতক সোহানাকে। হত্যার বর্ণনা ও দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দিন্দী দিয়েছেন হত্যার শিকার শিশুটির মা শান্তা আক্তার (২২)।

শনিবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায় সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন।

এদিকে হ্যত্যার মূল রহস্য উদঘাটন হওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। অন্যদিকে নিজের ছেলেকে নির্দোষ দাবি করে শিশুটির বাবা সুজনের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন তার মা ও বাবা।

বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায় বলেন, প্রথম থেকেই আমরা সোহানা হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখেছি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন, পরিবারের সঙ্গে কথোপকথন ও বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করা হয়। আমাদের ধারণা ছিল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে পরিবারের কেউ জড়িত রয়েছে। আমরা শিশুটির বাবা সুজন খানকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ এবং রিমান্ড আবেদন করি। আদালত সন্তুষ্ট হয়ে সুজনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

তিনি বলেন, সুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আমাদের মনে হয় নবজাতকের মা ও বাবাকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। দুইজনকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে শিশুটির মা আমাদের কাছে হত্যার বর্ণনা দেয়। নিজেই নিজের সন্তানকে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করেন। পরবর্তীতে শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে বাগেরহাট জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. খোকন হোসেনের সামনে শিশুটির মা শান্তা আক্তার পিংকি হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় যা আদালত রেকর্ড করেছেন।

সকল তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে এ মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট দেওয়া হবে বলে জানান পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোরেলগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত ঠাকুর দাস বলেন, হত্যার শিকার শিশুটির বাবা সুজন ও মা শান্তা দু’জনেরই আগে বিয়ে হয়েছিল। পিংকি ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার বনগঞ্জ গ্রামের মো. ইউনুছ শেখের মেয়ে। ২০১৭ সালে একই এলাকার উজ্জল ভূইয়া নামে এক ছেলের সাথে তার বিয়ে হয়। সেখানে পিংকির একটি মেয়ে রয়েছে। কিন্তু এরই মাঝে ২০১৯ সালের দিকে পিংকির সঙ্গে বর্তমান এ স্বামী মোরেলগঞ্জ উপজেলার গাবতলা গ্রামের সুজন খানের সাথে প্রেমের সম্পর্ক হয়। প্রেমের সূত্র ধরে পিংকি তার নাম পরিচয় ও বিয়ের বিষয় গোপন করে সুজনের কাছে চলে আসেন। ২০ দিন ধরে সুজনের বোনজামাই এনামুলের ঢাকার বাসা থেকে বিয়ের পরে সুজনের বাড়িতে আসে পিংকি। কিন্তু পিংকি পূর্বের বিয়ে ও সন্তানের কথা এই স্বামী ও তার পরিবারের কাছে গোপন রাখেন। আমরা মামলার সূত্র ধরে পিংকির বাবার পরিবার, পিংকির পূর্বের স্বামী-সন্তান ও কয়েকজন আত্মীয়ের সাথে কথা বলেছি। সুজনের পূর্বের স্ত্রী ও শান্তা আক্তার পিংকির পূর্বের স্বামীসহ বিভিন্ন পারিবারিক ঝামেলার জন্য পিংকির সন্তানকে হত্যা করতে পারেন এমনটি ধারণা করা হচ্ছে।

পিংকি আমাদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানিয়েছেন, তিনি রাতে ঘুমানোর পরে তার শরীরে প্রচণ্ড জ্বালা শুরু হয়। নিজের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বের হয়ে বাড়ির সামনের খাল, বাগান ও পুকুরের পাড়ে দৌঁড়াদৌঁড়ি করেন। এক পর্যায়ে ঘরের সামনের পুকুরের ঘাটে জামরুল (লকট) গাছের নিচে ফেলে দিয়ে ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়েন শান্তা আক্তার পিংকি। পরবর্তীতে রাত দেড়টার দিকে ঘুম ভেঙে সন্তানের জন্য কান্নাকাটি শুরু করে শান্তা।

হত্যার শিকার নবজাতকের প্রতিবেশী মরিয়ম বেগম, খলিলুর রহমান, হাসি বেগমসহ কয়েকজন বলেন, শিশুটি হারিয়ে যাওয়া ও মরদেহউদ্ধারের পর থেকে আমরা খুবই চিন্তিত ছিলাম। কিভাবে ঘটনা ঘটল এই চিন্তা করে। তবে এখন জানতে পারলাম সোহানার মা হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন হওয়ায় আমরা খুব খুশি হয়েছি। এ ধরণের ঘটনা আর না ঘটে সেজন্য এ ঘটনায় কটোর শাস্তি দাবি করেন তারা।

হত্যার শিকার নবজাতক সোহানার দাদা ও মামলার বাদী আলী হোসেন বলেন, আমার সন্তান সুজন খান নির্দোষ। আমি তার মুক্তি চাই। আমি নাতিও হারালাম, আবার ছেলেও জেলে এই বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

সুজনের মা নাসিমা বেগম বলেন, আমাদের আদরের ধন সোহানাকে হারিয়েছি। আমাদের চোখের পানি এখনও শুকায়নি। আমরা সুজনকে হারাতে চাই না। আমি সুজনের মুক্তি চাই।

সুজনের বোন রজিনা বেগম বলেন, শান্তা ভাবি আমাদের বাড়িতে আসার পরে বেশ কয়েকবার অস্বাভাবিক আচরণ করে বেহুশ হয়ে পড়তেন। আমরা তাকে স্থানীয় ওঝা-কবিরাজও দেখিয়েছি। সে আমাদেরকে বলেছিল তার সাথে জিন রয়েছে।

রোববার (১৫ নভেম্বর) রাতে মোরেলগঞ্জ উপজেলার গাবতলা গ্রামে বাবা সুজন খান ও মা শান্তা আক্তারের সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিল ১৭ দিন বয়সী সোহানা। মধ্য রাতে ঘুম ভেঙে তারা দেখেন যে শিশুটি হারিয়ে গেছে। সোমবার (১৬ নভেম্বর) ভোর থেকে পুলিশের একাধিক টিম শিশুটিকে উদ্ধারে অভিযান শুরু করলেও কোনো কূল-কিনারা পাচ্ছিল না পুলিশ।

সোমবার (১৬ নভেম্বর) রাতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মোরেলগঞ্জ থানায় মামলা করেন শিশুটির দাদা আলী হোসেন খান। বুধবার ভোরে নামাজের পর নিজ ঘরের সামনের পুকুরে নাতির মরদেহ ভাসতে দেখেন আলী হোসেন। পরে পুলিশ শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বাগেরহাট সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই রকম আরো সংবাদ

© All rights reserved © 2020 Aplusnews.Live
Design & Development BY Hostitbd.Com

অনুমতি ছাড়া নিউজ কপি দন্ডনীয় অপরাধ। কপি করা যাবে না!!