শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩, ০৩:০৯ পূর্বাহ্ন
নিউজ ফ্লাশ
লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজে বঙ্গবন্ধু স্মারক ভাস্কর্যের উদ্বোধন রজমান উপলক্ষ্যে ২শত দরিদ্র ও দুস্থ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা বিতরণ ‘লিচুর রাজ্য’ দিনাজপুরে সোনালি মুকুলে ভরে গেছে গাছ দাফনের প্রায় সাত মাস পর কবর থেকে তরুণীর লাশ উত্তোলন দেশের ২০ জেলায় হতে পারে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় নবাবগঞ্জ বাজার আন্ত:ফুটবল টুর্নামেন্টের চুড়ান্ত খেলা ও পুরস্কার বিতরণ নজরুল সংঘ  পাঠাগারের বার্ষিক সাধারণ সভা আইসিটি আইনের মামলায় গ্রেফতার মাহি, কারাগারে প্রেরণ জেলা পরিষদ সুপার মার্কেট দোকান মালিক সমিতির নতুন কমিটিকে ফুলেল শুভেচ্ছা পাওনা টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ভাতিজার ছুরিকাঘাতে চাচার মৃত্যু

৭ই মার্চে বাঙালি জাতিকে মুক্তির বাণী শুনিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু

এপ্লাস অনলাইন
  • আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ৭ মার্চ, ২০২৩

 

 

ঐতিহাসিক ৭ মার্চ আজ। বাঙালি জাতির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক উত্তাল জনসমুদ্রে দেশের স্বাধীনতার প্রস্তুতির ডাক দেন। বেলা ১১টা থেকে রেসকোর্স ময়দানে ছিল শুধু মানুষ আর মানুষ। লাঠি হাতে প্রতিবাদী মানুষ। শহরের মানুষ, গ্রামের মানুষ। শিক্ষিত, অশিক্ষিত, ধনী-গরিব ও বৃদ্ধা-যুবা। মোটকথা সব স্তরের মানুষ। ফলে ঘটনা প্রবাহে সেদিনের জনসভা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। উদ্দেশ্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনবেন সবাই।

বেলা ৩টা ২০ মিনিটে মঞ্চে ওঠেন স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু। গণমানুষের স্লোগানে আকাশ কাঁপিয়ে ওঠে- ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা’, ‘তোমার দেশ আমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ’। তিনি তার বজ্রকণ্ঠে বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বঙ্গবন্ধু জনগণকে মুক্তিসংগ্রামের প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, ‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল’। সেই ভাষণ বাঙালির মুক্তি ও জাতীয়তাবোধ জাগরণের এক মহাকাব্য। সেই ভাষণ এখন বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণিক দলিল। ৭ মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির মুক্তির বার্তা দিয়েছিলেন। ফলে তার ৭ মার্চের ভাষণ দেশের মানুষকে স্বাধীনতার প্রস্তুতি নিতে উজ্জীবিত করে। দীর্ঘদিনের পরাধীনতার গ্লানি, শোষণ, নির্যাতনের বিরুদ্ধে জ্বলে ওঠার মন্ত্র হিসেবে কাজ করে। ভাষণে উদ্দীপ্ত হয়ে আপামর জনগণ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করে।

দেশের স্বনামধন্য কবি নির্মলেন্দু গুণ রক্তঝরা একাত্তরের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বহুল প্রতীক্ষিত শিহরণ-জাগানো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ডাকসংবলিত ঐতিহাসিক বজ্রকঠিন ভাষণের মুহূর্তটি এভাবেই কবিতায় তুলে ধরেছিলেন। ‘একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য কি দারুণ অপেক্ষা আর উত্তেজনা নিয়ে/ লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে/ ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে/ ‘কখন আসবে কবি’?/ শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে/ রবীন্দ্রনাথের মত দৃপ্ত পায়ে হেঁটে/ অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন/ কে রোধে তাঁহার বজ্রকণ্ঠ বাণী?/ গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতাখানি/ এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম/ এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।/ সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের।’

একাত্তরের ৭ মার্চ মুক্তিকামী বাঙালি জাতিকে মুক্তির বাণী শুনিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বাঙালির পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার চূড়ান্ত প্রেরণা। দীর্ঘ ২৪ বছরের লড়াই-সংগ্রামের পর বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণেরই পরিণতি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।

স্বাধীনতার ৫২ বছরেও মাত্র ১৮ মিনিটের সেই ভাষণের আবেদন এখনও বিশ্বব্যাপী। প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে এ ভাষণ প্রেরণার উৎস। ১৯৭৫ পরবর্তী দীর্ঘ ২১ বছর বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণটি বাজানোর ওপর অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা ছিল। সময়ের ব্যবধানে স্বাধীনতার ডাকসংবলিত বঙ্গবন্ধুর বজ্রকঠিন সেই ভাষণকে বিশ^ প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো। ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ইউনেস্কো এ ভাষণকে তাদের ‘মোমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল’ রেজিস্টারে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। ইউনেস্কোর স্বীকৃতির পর বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি এখন বিশ্ব ঐতিহ্যের অমূল্য দলিল। এ ভাষণ বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় বাংলাদেশের মানুষের গৌরব-সম্মান আরেকবার আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই বাঙালি জাতি আজ কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বাঙালির স্বাধীনত-মুক্তি ও জাতীয়তাবোধ জাগরণের মহাকাব্য, বাঙালি তথা বিশের সব লাঞ্ছিত-বঞ্চিত নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের মুক্তির সনদ। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্বে সর্বাধিকবার প্রচারিত ও শোনা ভাষণ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের জন্য ১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন নিউজউইক সাময়িকী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘রাজনীতির কবি’ হিসেবে অভিহিত করে। একাত্তরের উত্তাল ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বাঙালির জাতির পিতা যে ভাষণ দেন, কিউবার ফিদেল ক্যাস্ট্রো সেটিকে আখ্যায়িত করেন ‘একটি অনন্য রণকৌশলের দলিল’ হিসেবে।

১৯৭১ সালে পরাধীনতার দীর্ঘ প্রহর শেষে পুরো জাতি তখন স্বাধীনতার জন্য অধীর অপেক্ষায়। শুধু প্রয়োজন একটি ঘোষণার, একটি আহ্বানের। অবশেষে ৭ মার্চ এলো সেই ঘোষণা। অগ্নিঝরা একাত্তরের এইদিনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা নামক মহতি কাব্যের স্রষ্টা কবি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বজ্রগম্ভীর কণ্ঠ থেকে ধ্বনিত হয়েছিল স্বাধীনতার ঘোষণা। বঙ্গবন্ধু শুধু স্বাধীনতার চূড়ান্ত আহ্বানটি দিয়েই ক্ষান্ত হননি, স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের রূপরেখাও দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণা মুক্তিকামী মানুষের কাছে লাল-সবুজ পতাকাকে মূর্তিমান করে তোলে। আর এই মাধ্যমে বাঙালির ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হয়। শুধু স্বাধীনতা যুদ্ধে নয়, বঙ্গবন্ধুর সেই বজ্রনির্ঘোষ আজও বাঙালি জাতিকে উদ্দীপ্ত করে, অনুপ্রাণিত করে। মূলত রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণই ছিল ৯ মাসব্যাপী বাংলার মুক্তি সংগ্রামের মূল ভিত্তি। বাঙালির নিজের দেশের হাজার বছরের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেওয়ার অবশ্যম্ভাবী পরিণতির দিকে এগোতে থাকে। তাই ৭ মার্চ বাঙালি জাতির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা একটি অনন্য দিন। সময়ের বিবর্তনে অনেক কিছুই কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। বিকৃতির নিকৃষ্ট ষড়যন্ত্রের আবহে বদলে ফেলার চেষ্টা হয়েছে স্বাধীনতার অনেক ইতিহাস। কিন্তু এ ৫২ বছরে অনেক কিছুই বদলে গেলেও বদলানো যায়নি, শুধু ১৮ মিনিটের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণটি। বিশে^র মধ্যে মাত্র একটি ভাষণ যা যুগের পর যুগ, বছরের পর বছর, ঘণ্টার পর ঘণ্টা বেজে চলেছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ঐতিহাসিক ভাষণটি যখন শোনে, তখনই তাদের মানসপটে ভেসে ওঠে স্বাধীনতার গৌরবগাথা আন্দোলন-সংগ্রামের মুহূর্তগুলো, আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে ওঠে দেশপ্রেমের আদর্শে।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ১৯৭১ সালের এ দিনে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বজ্রকণ্ঠে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। পুরো বাঙালি জাতি সেদিন মন্ত্রমুগ্ধের মতো অবগাহন করেছিল রাজনীতির মহাকবি বঙ্গবন্ধুর অমর কবিতা। মাত্র ১৮ মিনিটের এ মহাকাব্যে ধ্বনিত হয়েছিল বাঙালি জাতির মুক্তির মহামন্ত্র। বঙ্গবন্ধুর শাণিত ও প্রদীপ্ত উচ্চারণে কেঁপে উঠেছিল পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের মসনদ। মূলত ৭ মার্চের ভাষণেই নিপীড়িত-নির্যাতিত বাঙালি জাতি খুঁজে পেয়েছিল শোষণমুক্তির কাক্সিক্ষত পথ।

বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজ বাঙালি জাতির জীবনে এক অবিস্মরণীয় দিন। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের এই দিনে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে শহিদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) দাঁড়িয়ে বজ্রকণ্ঠে রচনা করেছিলেন ১৮ মিনিটের এক মহাকাব্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং বাংলাদেশ একই সূত্রে গাঁথা। একমাত্র বঙ্গবন্ধুই ছিলেন হাজার বছরের শোষিত-বঞ্চিত বাঙালিদের মধ্যে সবচেয়ে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর।

এদিকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সোমবার এক বিবৃতিতে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার জন্য দল ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর সব স্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক এবং সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

খবর: সময়ের আলো

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই রকম আরো সংবাদ

এ প্লাস ডিজিকম সার্ভিস

© All rights reserved © 2020 Aplusnews.Live
Design & Development BY Hostitbd.Com

অনুমতি ছাড়া নিউজ কপি দন্ডনীয় অপরাধ। কপি করা যাবে না!!